ফেরিওয়ালা নিবেদিত
ছবিতে যে ব্যক্তিকে দেখা যাচ্ছে তার নাম মো: মতিউর রহমান পেশায় তিনি মৎস্য ব্যবসায়ী। হয়ত অনেকেই চেনেন। শিমুলিয়া গ্রাম নিবাসী এই ব্যক্তি শুধুই মৎস্য ব্যবসায়ী হিসাবে পরিচিত তা নয় সে অত্যান্ত সুপরিচিত ও জনপ্রিয় তার সৌজন্যবোধ সততা আর মিষ্টি ব্যবহারের কারণে। পারিবারিক দারিদ্রতার কারণে বিদ্যালয় থেকে ঝরে পড়েন প্রাথমিকের গন্ডিতেই। হয়ত ঝরে পড়ার পরে কেউ তার ঝরে পড়া রোধ করতে পাশে এসে দাড়ায়নি। কোন এক শুভাকাংখির সহায়তায় ছোট বেলাতেই সংসারের দায়িত্ব কাধে নিয়ে ছোট ভাইদের মানুষ করতে শুরু হয় তার ব্যবসায়ী জীবন। আড়ত থেকে বা অন্য কোন বড় পুকুর ব্যবসায়ীদের থেকে মাছ কিনে বিক্রি করে বেড়াতেন বিভিন্ন হাট বাজারে। একসময় ধনী না হলেও স্বচ্ছলতা আসে সংসারে তার অক্লান্ত পরিশ্রম আর সততার গুনে। পরিচিতি বাড়তে থাকে কিন্তু মন থেকে মুছতে পারেননি ঝরে পড়ার যন্ত্রনা। কোন এক শুভানুধ্যায়ীর সহযোগিতায় বিদ্যালয়ের অব্যবহৃত পুরাতন বই সংগ্রহ করে একা একাই চেষ্টা করেন লেখাপড়া শিখতে। হয়ত অনেক দেরি হয়ে গেছে কিন্তু শেষ হয়ে যায়নি তার ইচ্ছা। ব্যবসার কাজ কর্ম আদায় পরিশোধ পরবর্তী দিনের জন্য মূলধন সংগ্রহ এই সকল কাজ করে বাড়ি ফিরত অনেক রাত হয়ে যেত ১২ টা বা১২:৩০ বেজে যেত। আবার ভোরে উঠে আড়তে বা পুকুর পাড়ে যেতে হবে মাছ কিনতে। মাঝে খাওয়া দাওয়া বিশ্রামের জন্য মাত্র চার ঘন্টা সময়। তবুও থেমে থাকেনি তার ইচ্ছা এই সময়টুকুর মধ্যেই আবার একটু লেখা পড়াও করতে হবে। অবশেষ এ বছর শেষ হলো তার আনুষ্ঠানিক শিক্ষা জীবন। স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করে সে এখনো ফুটপাথে মাছের ব্যবসা করছে। তার সরকারি চাকুরীতে আবেদন করার বয়স সীমা অনেক আগেই অতিক্রম করেছে। সে ফুটপাথে ব্যবসা করতে পছন্দ করে কিন্তু কারো দাসত্ব করা পছন্দ নয় তার তাই চাকুরীর চেষ্টা করেনা। এম,এ পাশ করা এই মানুষটি ফুটপাথে ব্যবসা করে দারিদ্র অভাবের সাথে লড়াই করলেও কখনো অবৈধ উপার্জনের পথে পা বাড়ান নি। ধণী হতে চাননা তিনি তবে তার স্বচ্ছলতাটুকু ধরে রাখতে চান। তার অদম্য লড়াইয়ে ক্ষুদা দারিদ্র্য অভাব আজ পরাজিত। হয়ত এমন হাজার হাজার মতিউর আমাদের সমাজে মিশে আছে যাদের কথা আমরা জানিনা কখনো জানতে চেষ্টাও করিনা। আমরাও হয়ত শিক্ষিত কিন্তু মতিউর রহমানের মত সুশিক্ষিত নয়। তাই মতিউরেরা হার মানতে জানেনা অথচ আমরা হেরে যায় পার্থিব ধনের লোভে। বিলিয়ে দেয় নিজেকে দাসত্বের শৃংখলে।