Adsense

লোগো ডিজাইন করতে গণিত জানতে হবে।

লোগো ডিজাইনে গোল্ডেন রেশিও
চিত্রকর্মের সাথে কি অংকের সম্পর্ক আছে ?
সাধারনভাবে প্রশ্নটা অদ্ভুত মনে হলেও যারা এবিষয়ে কিছুটা পড়াশোনা করেছেন তারা দ্রতই বলবেন, আছে। লিওনার্দো দা ভিঞ্চি থেকে পাবলো পিকাসো পর্যন্ত সকলের ছবি নিখুত জ্যাতিমিক ছকে আকা। একসময় শিল্পীরা জ্যামিতিক ছকনির্ভর ছবিতে এতটাই আগ্রহ দেখিয়েছিলেন যে অনেকে বলতেন শিল্পী হওয়ার জন্য স্কেল, কম্পাস থাকাই যথেস্ট।
আর্শ্চজনকভাবে চিত্রকর্মের সাথে গনিতের এই সম্পর্ক প্রতিস্ঠা করে গেছেন ফিবোনাচি নামে একজন ইটালিয়ান গনিতবিদ, ১২০২ সালে। তার নামানুসারে একে বলা হয় ফিবোনাচি ফাংশন। ১৮৬০ সালে জার্মান পদার্থবিদ এবং মনোবিজ্ঞানী গুস্তাভ থিওডোর ফেচনার দেখিয়েছেন সরল একটি অনুপাত প্রকৃতিতে সমতা রক্ষা করে। ফিবোনাচি ফাংশনকে আরো সরলভাবেভাবে বলা হয় গোল্ডেন রেশিও, কারন দুজনের পদ্ধতি একই অংক প্রকাশ করে। এর মান ফাই Φ (১.৬১৮০৩৩৯৮৮৭৪ ...) এর সমান।
ফাই পুরোপুরি অংকের বিষয়। সেদিকে না গিয়ে বরং ব্যবহারিক অর্থে দেখা যাক সেটা কি।
ফিবোনাচি দেখিয়েছেন ফাই এর মান ১, ১, ২, ৩, ৫, ৮, ১৩, ২১ ইত্যাদি সংখ্যার ক্রমবিকাশের একটি অনুপাত। সংখ্যাগুলিকে কি বিদঘুটে মনে হচ্ছে ? পাশাপাশি দুটি সংখ্যাকে যোগ করলে পরবর্তী সংখ্যা পাওয়া যায়। যেমন ১+১=২, ১+২=৩, ২+৩=৫ ইত্যাদি। যখন দুটি পাশাপাশি সংখ্যাকে যদি ভাগ করা যায় তাহলে যে মান পাওয়া যাবে সেটা ফাই এর খূব কাছাকাছি। যেমন ৫/৩=১.৬৭, ২১/১৩-১.৬১৮।
এই সংখ্যার আসলে গুরুত্ব কি ?
বিভিন্নজন বিভিন্নভাবে এর ব্যাখা দিয়ে থাকেন। কেউ বলেন স্বর্গিয়, কেউ বলেন প্রকৃতির ভারসাম্য এবং সৌন্দর্য এভাবেই সবচেয়ে বেশি প্রকাশ পায়। এই সুত্র ব্যবহার করে তৈরী চিত্রকর্ম, ডিজাইন, কম্পোজিশন, স্থাপত্য সবকিছুতে তাই এর ব্যবহার। হয়ত অবাক হতে পারেন শুনে, মিসরের পিরামিড থেকে শুরু করে বর্তমানের ক্রেডিট কার্ডের আকার, সবকিছুই এই নিয়মে তৈরী।
অত্যন্ত সরল একটি লোগোর উদাহরন দিয়ে দেখা যাক। কখনো ভেবে দেখেছেন কি ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকের লোগো এত সরল হওয়ার পরও সকলের পছন্দ কেন ?
সোনালী একটি আয়তক্ষেত্র, এর দৈর্ঘ এবং প্রস্থের অনুপাত ১.৬১। অর্থাত এটা গোল্ডেন রেশিও অনুযায়ী তৈরী। অন্যঅর্থে তারা বলছে, গোল্ডেন রেশিওর আয়তক্ষেত্র হচ্ছে এই প্রকৃতি। তাদের মুলমন্ত্র হচ্ছে প্রকৃতির যত্ন নেয়ার বিষয়ে সবাইকে উদ্বুদ্ধ করা।
ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকের হিসেব বোঝা তুলনামুলক সহজ। সহজেই দৈর্ঘ্য এবং প্রস্থ জানা যায়।  পেপসি কিংবা এপলের লোগো কিভাবে এই সুত্র মেনে তৈরী? আপাত দৃষ্টিতে এই লোগো গুলি প্রায় গোলাকার।
পেপসি লোগোর পুরো বৃত্ত এবং ভেতরের সাতা বাকানো অংশ লক্ষ্য করুন। সাদা অংশের সাথে মিল করে আরেকটি বৃত্ত আকলে দ্বিতীয় মাপ পাওয়া যাবে। এই দুই বৃত্তের অনুপাত ১.৬১৮, অর্থাত গোল্ডেন রেশিও।
টয়োটার লোগো আরেকটি ভাল উদাহরন হতে পারে। ৪টি উপবৃত্ত দিয়ে লোগোটি তৈরী। ছবিতে এদের আকার এবং দুরত্ব দেখে নিন। এর অনুপাত ১.৬১৮।
প্রশ্ন করতে পারেন, লোগো ডিজাইনের সময় কি এই হিসেব করে লোগো আকতে হবে ?
সাধারনভাবে হয়ত প্রয়োজন নেই। কিন্তু কোন ক্লায়েন্ট যদি নির্দিষ্টভাবে বলে দেন তিনি গোল্ডেন রেশিওর লোগো চান (একাধিকবার এই বিষয়ের উল্লেখ পেয়েছি) তাহলে না করে উপায় নেই।
কখনো যদি মনে করেন এমন লোগো তৈরী করবেন যা বিশ্বজুড়ে পরিচিত হবে তাহলে এটা মনে রাখাই ভালো, এধরনের লোগো হঠাত হরে তৈরী হয় না।

No comments: