Adsense

আতিকুর রহমান সহ: শিক্ষক এর লেখা থেকে সংগৃহীত

সন্তানের আদর্শিক পুরুষ কে হতে পারেন? আদর ও শাসনের প্রতীক কে হতে পারেন? অবশ্যই বাবা। আমরা যে বটবৃক্ষের ন্যায়, ছাতার ন্যায় তুলনা করি তাও বাবাকে নিয়ে। বাবা শব্দটির সঙ্গে নির্ভরশীলতা অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। বাবা কথাটির মাঝেই যেন লুকিয়ে রয়েছে শ্রদ্ধা, ভালোবাসা, নির্ভরশীলতা, আশ্রয়। প্রত্যেক সফল মানুষকে সফল হয়ে উঠতে যে মানুষটি অনেক পরিশ্রম, অনেক ত্যাগ, অনেক ভালোবাসা, অনেক স্নেহ-মমতা, ছায়া, দিকনির্দেশনা দিয়ে বড় করে তোলেন তিনিই বাবা। অনেক সাধনার ধন সন্তানকে সুখী করার জন্য বাবার প্রাণান্তকর চেষ্টার কোনো ত্রুটি নেই। সন্তানের ভবিষ্যৎ চিন্তা করে, সন্তানের মুখে হাসি ফোটাতে বাবার সে কী পরিশ্রম। নিজের কথা বাবা তখন বেমালুম ভুলে যান। দাঁত থাকতে অনেকেই যেমন দাঁতের মর্ম বোঝে না, তেমনি বাবার স্বীয় অবস্থানে তারা তার অভাব কী করে বুঝবে? যাদের বাবা বর্তমান তাদের বাবার অভাব বোঝানোর সাধ্য আমার নেই। যার বাবা নেই সে-ই বোঝে বাবা হারানোর কত কষ্ট, কত বেদনা। তারাই বোঝে বাবা কী।
বাবা। তুমি তো চলে গেছ, চলে যাওয়ার জন্য। অন্যরা যেমন যায়। তোমার পারাপারের দিনটির কথা কি মনে আছে? না থাকারই কথা। এতদিন আগের কথা কেউ কি মনে রাখে। বাবা তুমি একটা বিষয় খেয়াল করেছ? তোমার ছোট্ট ছেলেটি আজ কত বড় হয়েছে? অনেক বড় হয়েছে। এতই বড় যে কারো চোখে ধরে না। তোমার চলে যাওয়ার দিনের কথা মনে আছে? পরিবেশটা কেমন যেন ভার ভার মনে হচ্ছিল। তোমার ছোট্ট ছেলেটি সেই ভারের তাৎপর্য বোঝে না, বোঝে না প্রিয়জন হারানোর ব্যথা, বোঝে না কেন সবাই এত কান্নাকাটি করে। সে নিথর-স্তব্ধ-বাকরুদ্ধ। শুধু ফ্যাল ফ্যাল চোখে তাকিয়ে থাকা। অথচ কী আশ্চর্য, তোমার শবদেহটি যখন শহর থেকে বাড়ির কাছাকাছি পেঁৗছায়, তখন তোমার প্রিয় গৃহপালিত পশুগুলো আর্তনাদ করে ওঠে। তাদের চিৎকারে শোকের ছায়া নেমে আসে বাড়িতে। পাষাণ হৃদয়ও হুহু করে কেঁদে ওঠে। অথচ এই আমি ভাবলেশহীন। বুঝতে পারছ বাবা আমাকে কতটুকু রেখে তুমি চলে গেছ? আমি বুঝি। এখন বুঝি। বুঝি বলেই খোঁজার ব্যর্থ চেষ্টা করি। কেঁদে মরি খোঁজার তরে, জোছনার আলোয় গভীর রাতে। জান বাবা, তোমার সমাধিস্থলের পাশেই তোমারই করা শানবাঁধানো পুকুরঘাটে প্রায় জোছনায় গভীর রাত পর্যন্ত বসে থাকি। তোমার সঙ্গে দেখা হবে, কথা হবে। বলব আমি কেমন আছি। তোমার ছেলে কেমন আছে। কেমন থাকার কথা ছিল। কষ্ট হয়, ভীষণ কষ্ট হয় তোমার ছেলের জন্য। সে এখনো মরিয়া হয়ে খুঁজে বেড়াচ্ছে একটু সুখ, শ্যামলছায়া, একটু স্নেহ-আদর, ভালোবাসা। শান্তি, আনন্দমুখর একটি পরিবেশ। সুন্দর মনের একপাল মানুষ। সর্বোপরি একটি অবস্থান। জানি তুমি থাকলে তা হয়েও যেত। কারণ তুমি যে নির্ভরশীলতার প্রতীক, তুমি যে বাবা। 'তোমার হলো শুরু, আমার হলো সারা/তোমার আছে ডানা, আমার আছে জল/তোমার বসে থাকা, আমার চলাচল।' অবাক হলে তাই না বাবা! এটাই সত্য, এটাই বাস্তবতা। ওপারেতে তোমার যাত্রা শুরু, তোমার চলে যাওয়ায় আমার হলো সারা। চলছি তো চলছি। অবিরাম সে চলা। এ চলা কবে শেষ হবে জানি না। যে পথে চলব বলে তুমি ভেবেছ, তার থেকেও সরল পথে চলছি। তার পরও কাঁটার আঘাতে ক্ষতবিক্ষত হয়েছে হৃদয়। মজার ব্যাপার হলো, কখনো এ আঘাতে উহ করিনি। বুঝতে দিইনি প্রতিবেশী বা সঙ্গী-সাথীদের। শুনবে সেসব কাহিনী? এসো কোনো এক পূর্ণিমা রাতে, সেই শানবাঁধানো পুকুরঘাটে। তোমাকেই বলব না-বলা কথাগুলো।

No comments: