বিক্ষিপ্ত মন বিক্ষিপ্ত ভাবনা। একটা বিষয়ের যোগ বিয়োগ মেলাতে পারিনি। বিষয়টি অন্য কোন কিছু নয়। রোহিংগা ইস্যু। মায়ানমারের বৌদ্ধভিক্ষুগন এবং মগ উপজাতিরা কেন মুসলিমদের বিতাড়ন করছে। তারা কি শুধু মুসলিম নিধন ও বিতাড়ন করছে নাকি বাংগালীদের নিধন ও বিতাড়ন করছে। ইতিহাস স্বাক্ষ্য বহন করে চলেছে মগেরা একসময় জলদূস্য হিসাবে পরিচিত ছিল আর বাংলা ভূখন্ডটি ছিল বৌদ্ধদের তীর্থস্থানের মত। যদিও বাংলায় মুসলীম বসতির সূচনা হয় সপ্তম শতক থেকে। কিন্তু শাসনের সূচনা ১২০১ এ মুসলীম পরিব্রাজক ইখতিয়ার উদ্দিন বখতিয়ার খিলজীর বাংলায় আগমনের পটভূমি থেকে। যেহেতু ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হযরত ওমরের আমলেই অর্ধেক পৃথিবী মুসলিম শাসন এর আওতাধীন ছিল সেহেতু বাংলাও তার বিজিত অংশ হওয়াটাও স্বাভাবিক কারন হিসাবে উল্লেখ করা যায় মধ্যপ্রাচ্য থেকে এই ভুখন্ডে আসার পথ স্থল্পপথ। আবার খলিফা ওমরের নৌবাহিনী থাকায় তারা উপকুলীয় অঞ্চলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে মগ জলদুস্যদের বিতাড়িত করে থাকতে পারে এটাই স্বাভাবিক। আবার যেহেত এই ব্দ্বীপ অঞ্চলটি বৌদ্ধ অধ্যুষিত উন্নত শিক্ষিত লোকের আনাগোনা ছিল এবং সবাই সহাবস্থানে বসবাস করত। বৌদ্ধদের সাথে এই ভুখন্ডের মানুষ এবং নবাগত মুসলীমরা যখন মিলে মিশে বসবাস করে উন্নতির পথে আরো দ্রুত অগ্রসর হচ্ছিলেন ঠিক সেই সনয় সেন রাজারা এটাকে স্বাভাবিক ভাবে মেনে নিতে পারেনি। তারা নিজের ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে সৈরাচারীতা এবং সেচ্ছাচারিতার প্রয়োগ ঘটান এবং তাদেরকে এ কাজে সহায়তা করেন ততকালীন রাজপন্ডিতগণ ফলে রাজা লক্ষন সেনের আমলে নির্যাতিত হয়ে বৌদ্ধধর্মাবলম্বীরা নেপাল ও বার্মার দিকে পলায়ন করতে থাকে তারা তখন ভেবে নিয়েছিল পাহাড়ী অঞ্চল অনেকটাই দূর্গম ফলে এগুলো নিরাপদ গন্য হতো। নইলে বাংলা সাহিত্যের প্রাচীন যুগের পান্ডুলিপি নেপালের রাজদরবারে খুজে পাওয়ার আর কোন কারন ভাবতে পারছিনা। এবং তৎকালীন সময়ে রাজা লক্ষন সেনের পরিষদের অনুগামীরা প্রচার করে বাংগালীর সাথে বৌদ্ধদের সাংস্কৃতিক দ্বন্দ্ব বলে প্রচারনা চালান। ফলে বৌদ্ধদের মনে দাগকাটে বাংগালীর সংগে তাদের বিরোধের। ফলে বৌদ্ধদের মনে বাংগালী বিদ্বেসী মনোভাব গড়ে উঠে। এরপর যখন মুসলিম হিসাবে বাংলার মসনদে আসেন এবং রাজা লক্ষন সেন পলায়ন করেন তখন খিলজি বাংলার সবকিছু বুঝে উঠবার আগেই রাজা লক্ষন সেন বেশ কিছু বৌদ্ধ নিধন করলে সভাবতই প্রচার হয়ে যায় মুসলিমরা বৌদ্ধ বিদ্বেষী। যারা ইসলামের ইতিহাস সম্বন্ধে অবগত আছেন তারা এটা নিশ্চয় জানেন কোন মুসলিম শাসক কখনই ভিন্নধর্মের মতাবলম্বীদের প্রতি বিদ্বেষী ছিলেননা। বরং তারা ছিলেন নিজ ধর্মের বিপথগামী মানুষ বিদ্বেষী। যারা কাফের মোনাফেক নামে পরিচিত ছিল। যে ভূখন্ডে একসময় বৌদ্ধদের একক আধিপত্য ছিল যে ভূখন্ডে তারা শিক্ষা দীক্ষা শিল্প সংস্কৃতিতে বিপ্লব ঘটিয়েছিল তাদেরকে সেখান থেকে উৎখাত করে যে ভুখন্ড দখল করা হয়েছিল তাদের সেই অনু রাগ হওয়া অস্বাভাবিক কি? না। তবে শত শত বৎসর পর সেটা অবশ্যই অস্বাভাবিক। যারা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভক্ত তারা অনেকেই জানেননা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হিন্দু সমাজে বিয়ের অযোগ্য ছিলেন বাংগালী বলে তাই তাকে বিয়ে করতে হয়েছিল নিজ জমিদারী স্টেটের কর্মচারীর মেয়েকে। যা তৎকালীন সময়ে মর্যাদাকর ছিলনা। দেশ ভাগের সময় এই প্রশ্নটি প্রকট হয়ে উঠে আমাদের পরিচয় নিয়ে। কি হবে আমাদের পরিচয় হিন্দু/ বাংগালী/মুসলীম যদিও দ্বিজাতিতত্ত্ব কে ভিত্তি করে আমরা বিভাজিত হয়েছি তবুও আমাদের কে না গ্রহণ করেছে হিন্দুরা না গ্রহণ করেছে মুসলীমরা তবে আমরা কি? এই প্রশ্ন আজো সমাধান হয়নি কেউ বা আমাদের হিন্দু বলে ধ্বিক্কার দেয় কেউ বা দেয় মোনাফেক কাফের বলে। কিন্তু কেউ বলেনা ওরা ধর্মের উপরে বাংগালী। যাদের ধর্মই হলো মানবতার।
No comments:
Post a Comment