Adsense

নারী বন্দনা

সৃষ্টিকর্তার সকল সৃষ্টি মানবের কল্যানে। এই মানবের আবার দুটি শাখা রয়েছে যার একটি শাখা অপর শাখার পরিপূরক। একটি অংশ অপর অংশটি ছাড়া অপূর্ণ। মানবের সামাজিক অবস্থান অনুসারে একটি শাখা পুরুষ অপর শাখা নারী। তবে নারী সৃষ্টি করা হয়েছে পুরুষের প্রয়োজনে। এই অর্থে পুরুষের স্থান সবার উপরে আবার মর্যাদা সবচেয়ে বেশি দেওয়া হয়েছে নারীকে। এই অর্থে নারীর অবস্থান পুরুষের উপরে। পুরুষ সৃষ্টিকুলের সবচেয়ে বুদ্ধিমান প্রাণী এত বুদ্ধি থাকা স্বত্ত্বেও পুরুষের কাছে নারী অবোধ্য। যদিও কেউ কেউ মনে বলেন আমি বুঝি বাস্তবতা হলো তিনিও বোঝেননা বরং সহনশীল মানষিকতার নারী উক্ত পুরুষের বোধশক্তির অনুগত থাকার অভিনয় করে থাকে। একজন নারীর মানষিকতা সহনশীলতা আনুগত্য নানা সামাজিক গুনাবলীর কারণে অনেক বাধ্যবাধকতার বেড়াজালে আবদ্ধ। সে কার কথা রাখবে? সবারটাই তাকে ভাবতে হয়। আর এই ভাবনার কারণে সে সকলের মন রক্ষা করে চলার চেষ্টা করে নিজের সর্বস্ব ত্যাগ করেও শেষ পর্যন্ত কারোরই মন রক্ষা করতে পারেনা। সকলের কাছে লোভী স্বার্থপর খেতাব অর্জন করে। আমরা কেউ তার সীমাবদ্ধতা বা বাধ্যবাধকতা বুঝিনা বোঝার চেষ্টাও করিনা। শুধু দোষারোপটুকুই করে যাই। একজন পিতা চাইতেই পারে আমার মেয়ে বিয়ের আগে অন্যকোন সমবয়সী পুরুষের সংগে না উঠাবসা করুক কারণ এতে সামাজিক সম্মানহানি বা চরিত্র স্খলনের ভয় থাকে। এই চাওয়াটা অমূলক নয়। মেয়েরা সেটা মেনেও চলার চেষ্টা করে কিন্তু বাধ সাধে সেই ছেলেটি যে তার এই আচরণের জন্য মুগ্ধ। আবার সে চায় মেয়েটি তার সাথে কথা বলুক একটু হাসাহাসি করুক একটু পাশাপাশি পথ চলুক একটু অনুপ্রেরণা যোগাক যেন সে সফল হতে পারে। যেহেতু টেলিপ্যাথিক কারণে মেয়েটির মনেও সেই ছেলেটির ছবি ভেষে ওঠে। সে ভাবে ক্ষতি কি যদি আমার একটু সহযোগীতায় যদি তার ভবিষ্যৎ সুন্দর হয়! নিজের মনে পরের মংগলের তাগিদ অনুভব করে। বাবার কথাও মনে পড়ে তার। একটু অবাধ্য হয় বাবার। ছেলেটির অনুরোধ রক্ষা করার চেষ্টা করে হয়ত বাবার চোখ ফাকি দিয়ে। বাবা ব্যস্ত মানুষ সবসময় মেয়েকে চোখে চোখে রাখতে পারেননা নিজের সন্তানের প্রতি আত্মবিশ্বাস আছে বলেই বাবা মেয়ের পেছনে টিকটিকির মত গোয়েন্দাগিরি করেননা। মেয়েটিও বাবার আত্মবিশ্বাসে ফাটল ধরায়না। কিন্তু সে যে ছেলের মংগল করার তাগিদ অনুভব করে সে ছেলেটি মেয়েটির ভাইয়ের চোখে ভাল ঠেকেনি বা ভাইয়ের কোন বন্ধু হয়ত এই হাসাহাসির বিষয়টি যেনেছে বা হয়ত ছেলেটি তার কোন বন্ধুর কাছে নিজের অনুভুতি জাহির করে ফেলে মনের আনন্দে ফলে এক কান বা দুই কান করে বিষটি জানাজানি হয়েই যায়। বাবা ভাই মনে করে মেয়েটির কারণে তাদের সম্মানহানি হয়ে গেছে। সম্মান ফেরানোর উপায় হিসাবে মেয়েটিকে বিয়ের পিড়িতে বসানো হলো। মেয়েটি হয়ত পিতা বা ভাইয়ের হারানো সম্মান পুনুরুদ্ধারে নিজের ইচ্ছা অনিচ্ছাকে জলাঞ্জলি দিয়ে বাবা ভাইয়ের পছন্দের অচেনা অজানা ছেলের হাত ধরে। নতুন একজন মানুষ আবির্ভাব ঘটে জীবনে। সেই ব্যক্তির সম্মান রক্ষা তার সংসারের ভারসাম্য রক্ষার দায়িত্ব কাধে চাপে মেয়েটির। মেয়ে থেকে সে আবির্ভূত হয় নারীরুপে। নিজের সর্বোচ্চ সম্পদ বিলিয়ে দিয়ে নিজেকে নিয়ে ভাববার অবসর তার আর মেলেনা। হয়ত নিজের অনিচ্ছাতেই আগের সেই ছেলেটির সংগে দেখা যদি হয়েই যায় তবে সব দোষ যেন শুধু মেয়েটির হয়ত অনেক অকথ্য কথার বানে ঝরঝর করে দু নয়ন, স্বামী হয়ত চোখে জল দেখে ভাবে। এই নারী আমাকে প্রতারিত করেছে হয়ত পুরোনো স্মৃতি মনে পড়েছে। একগুচ্ছ নোংরা ভাষার অমীয় বানী নারীর কানে বাজে। এবার তার অন্তর্যামীও কান্নার সংগী হয়। হয়ত কিছুদিন বাবার বাড়ী ঘুরে এলে ভাল লাগবে। নাইয়র যায়। স্বামী হয়ত ভাইকে বা মেয়ের বাবাকে জানিয়ে দেয় সে অতীতের ছেলেটির কথা ভূলতে পারছেনা সংসারে মন নেই এই সেই। এবার ধিক্কার বাবা ভাইয়ের কুলটা অলক্ষী। প্রসংগ উঠে আসে তার জন্ম না হওয়াটাই ভাল ছিল। নারীকে শান্তনার বানী শোনান মাতা। একটা সন্তান গর্ভে ধারণ করলে সব ঠিক হয়ে যাবে। ঠিক তাই স্বামীর ঘরে ফিরে এসে ধারণ করে গর্ভ জন্ম দেয় একটি পুত্রসন্তান এসব নিয়ে দিন কাটাতে কাটাতে সন্তান বড় হতে থাকে। স্বামী সবসময় বাড়িতে থাকেননা নানা কাজে ব্যস্ত থাকেন। সন্তানের আবদার পুরনের দায়িত্ব নিতে হয় নারীকে। সন্তান বন্ধু বান্ধবের সাথে উঠা বসা করতে করতে দুষ্টমীর ছলে ছোট খাট একটা অপরাধ নিজের অজান্তেই করে বসে অথচ এমন অপরাধ করার অভিপ্রায় কখনই তার ছিলনা। অভিযোগ চলে যায় বাবার কাছে তথা নারীর স্বামীর কাছে। ঘরে ফিরে স্বামী শুধু সন্তানকে শাসন করেই ক্ষান্ত হননা। সমস্ত দোষ চাপিয়ে দেন ছেলের মায়ের ঘাড়ে। কি করেন তিনি বাড়িতে বসে বসে? সন্তানের খেয়াল রাখতে পারেনা। অর্থাৎ এই দায়টাও নারীর। অথচ এতজন পুরুষের মন রক্ষার চেষ্টা করা নারীর অপরাধ কোনটি? আদৌ কি সে অপরাধী? হ্যা সেই নারী অপরাধী। কারণ সে সকলের মংগল কামনার অপরাধ করেছে যেটা আমাদের সামাজিক আচরণের পরিপন্থী। আমাদের আচরণ হলো যে ভাল কিছু করবে তাকে পেছন থেকে টেনে ধরা। অবশ্য সকলের মংগল কামনা বা মন রক্ষার চেষ্টা করা তার দ্বিতীয় অপরাধ এবং গুরুতর দণ্ডনীয় অপরাধ। তার প্রথম অপরাধ হলো এই পুরুষ নিয়ন্ত্রিত সমাজে নারী হিসাবে জন্ম গ্রহণ করা। আর আমরা পুরুষ হিসাবে তাদের জন্য ন্যায় দিতে পারিনা। তাদের মূল্যায়ন করতে জানিনা। তবুও নারী হলো পুরুষের জন্য সৃষ্টিকরা সৃষ্টিকর্তার এক অপার বিস্ময়। আর এই বিস্ময় উদঘাটনের একমাত্র উপায় হলো নারীকে যথোপযুক্ত মূল্যায়ন করা। নারী হলো সৃষ্টিকর্তার এমন এক সৃষ্টি এবং সবসময় নির্দোষ যদি কোন দোষে সে দুষ্ট হয় তবে বুঝতে হবে এটা তার দোষ নয় আর্থসামাজিক ব্যবস্থাপনার দোষে সে দোষী।

No comments: